Wednesday, 11 March 2020

ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মহিবুল্লাহ


ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মহিবুল্লাহ। বাবা বরিশাল নগরীর প্রসিদ্ধ পুস্তক ব্যবসায়ী। বিএ পাস করার পর মহিবুল্লাহও ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। নিজে পৃথক ব্যবসা করলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হচ্ছিল না। একের পর এক লোকসানে মনোবল ভেঙে পড়ে তার। মহিবুল্লাহ যখন গভীর হতাশায় নিমজ্জিত, তখনই ইউটিউবে খুঁজে পান বর্তমান সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ পদ্ধতি 'রি-সার্কুলেশন অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম ও বায়োফ্লক' (রাস)। এ সময় সহায়ক হিসেবে পেলেন পূর্বপরিচিত অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী এক মৎস্য গবেষককে। তার পরামর্শে 'রাস' পদ্ধতিতে মাছের খামার করেন তিনি। খামারটি স্থাপনের এক বছরের মধ্যে লাভজনক হয়। এখন মহিবুল্লাহর মাসিক গড় আয় লাখ টাকা।

রাস পদ্ধতিতে হাউজে (জলাধার) মাছ চাষ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান কাজ হচ্ছে বারবার পানি বদল করা। এতে অ্যামোনিয়া-নাইট্রোজেন সমতা থাকায় পানির যথাযথ মান বজায় থাকে। ফলে মাছের বৃদ্ধি হয় দ্রুত। স্বাদও থাকে অক্ষুণ্ণ। পোনা ছাড়ার ৩-৪ মাস পর মাছ বড় হলে বাজারজাত করা হয়।

বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলার পূর্ব তীরে চানপুরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে ৭৩ শতাংশ জমিতে 'এমএম এগ্রো প্রজেক্ট' নামে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষের খামার করেছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দা মহিবুল্লাহ। এখানে দেশি কই, শিং ও তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হয়। পাশাপাশি গরু, ভেড়া, কবুতর, হাঁস-মুরগিও লালনপালন করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, মহিবুল্লাহর প্রকল্প এলাকায় ছয়টি পাকা হাউস স্থাপন করা হয়েছে। এ হাউসগুলোতে দেশি জাতের কই, শিং ও তেলাপিয়া মাছের পোনা রাস পদ্ধতিতে বড় করা হচ্ছে।

মহিবুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালে প্রকল্পে তিনি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। দেশি জাতের পোনা সংগ্রহ করে হাউসের মধ্যে রেখে তিন মাস পর সেগুলো বিক্রির উপযোগী করে বাজারজাত করেন। এতে তার মাসিক গড় আয় হয় এক লাখ টাকা। তিনি জানান, ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে দেশি কই-শিং পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা ওই মাছ ভোক্তাদের কাছে প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৪০০-৪৫০ টাকা। তার খামারে দু'জন স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আরও ৫-৬ জন কাজ করেন।

মহিবুল্লাহ বলেন, সর্বশেষ গত জানুয়ারির শেষভাগে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কই-শিং বিক্রি করেছেন। তিন মাস ধরে ওই মাছ লালনপালন করতে তার ব্যয় হয়েছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এতে তার লাভ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে তার খামারে ৬০ হাজার কই ও ৫ হাজার শিং মাছ রয়েছে। এগুলো বিক্রির উপযোগী হবে আগামী মার্চ মাসে।

প্রকল্পের সমস্যা সম্পর্কে মহিবুল্লাহ বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। এটিই এখানে প্রধান সংকট। অনেক দূরে থাকা একটি গভীর নলকুপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। প্রকল্প এলাকায় একটি নলকূপ স্থাপনের জন্য জেলা পরিষদে বারবার ধরনা দিয়েও সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গত বুধবার সদর উপজেলার ইউএনও মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল মহিবুল্লার 'এমএম এগ্রো প্রজেক্ট' পরিদর্শন করে। ইউএনও বলেন, তার কর্মজীবনে এমন প্রকল্প দেখেননি। তার ধারণা, বরিশাল বিভাগে এ রকম খামার আর নেই। প্রকল্পটির উন্নয়নে তরুণ উদ্যোক্তা মহিবুল্লাহকে তার আওতাধীন সব দপ্তরের সহায়তা দেওয়া হবে।

বরিশালের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, 'রাস' পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রচলন বাংলাদেশে তেমন নেই। তরুণ মহিবুল্লাহ এ পদ্ধতিতে মাছের খামার করে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অনুপ্রেরণায় এলাকায় আরও উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এতে কর্মসংস্থানও বাড়বে। তাকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment